Blog

আটার ৭টি অবাক করা ব্যবহার যা আপনার অজানা

আটা আমাদের রান্নাঘরের অন্যতম পরিচিত উপাদান, যা প্রতিদিনের খাবার তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়। তবে, এই পরিচিত উপাদানটির গণ্ডি কি শুধু রুটি বা পরোটা তৈরিতেই সীমাবদ্ধ? হয়তো না। আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন, আটা কেবল রান্নার কাজ ছাড়াও আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অন্য ক্ষেত্রেও কতটা কার্যকরী হতে পারে? আটা যে শুধু খাবার নয়, বরং বিভিন্ন ঘরোয়া সমস্যার সমাধানে ব্যবহার করা যায়, সেটা হয়তো অনেকেরই অজানা। আপনাকে অবাক করার মতো কিছু অভিনব এবং অপ্রচলিত উপায়ে আটা কীভাবে ব্যবহার করা যায়, সেটি জানার জন্য পড়তে থাকুন পরবর্তী অংশ, যেখানে আমরা আটার ৭টি অবাক করা ব্যবহারের কথা তুলে ধরেছি, যা আপনি আগে কখনো শুনেননি!
Share This with Others!
Table of Contents

আটার অজানা ৭ ব্যবহার 

আটা দিয়ে আপনি শুধু সুস্বাদু খাবারই বানাতে পারবেন না, বরং এর সাহায্যে ঘরোয়া অনেক সমস্যাও সমাধান করা সম্ভব। এই প্রাকৃতিক উপাদানটি দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করতে পারে নানা উপায়ে, যেমন –

১. ত্বক পরিষ্কারক হিসেবে আটা

আটা ত্বকের যত্নেও খুবই কার্যকরী। এটি ব্যবহার করে সহজেই ত্বক পরিষ্কার ও উজ্জ্বল করা যায়। আটা প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে ত্বকের মৃত কোষ দূর করে এবং ত্বককে মসৃণ ও নরম করে তোলে। একটি প্যাক বানাতে, ২ টেবিল চামচ আটা, ১ টেবিল চামচ মধু এবং কিছু দুধ মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এরপর এটি মুখে ও ঘাড়ে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। আটা ত্বকের ময়লা ও অতিরিক্ত তেল শোষণ করে, ফলে ত্বক সতেজ ও স্বাস্থ্যকর থাকে। নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে এবং কালো দাগ কমে যায়। 

২. চুলের যত্নে আটা

চুলের যত্নেও আটা ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি চুলের অতিরিক্ত তেল দূর করতে এবং স্ক্যাল্পকে পরিষ্কার রাখতে সহায়ক। আটা দিয়ে ড্রাই শ্যাম্পু তৈরি করা যায়, যা চুল পরিষ্কার করার পাশাপাশি স্ক্যাল্পের ময়লা শোষণ করে। ২-৩ টেবিল চামচ আটা চুলের গোড়ায় লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ভালোভাবে ব্রাশ করে নিন। এটি চুলের অতিরিক্ত তেল ও ময়লা শোষণ করবে, ফলে চুল ঝলমলে ও পরিষ্কার দেখাবে। তেলতেলে চুলের সমস্যায় যারা ভোগেন, তাদের জন্য এটি একটি সহজ ও কার্যকরী সমাধান।

৩. পোশাকে তেলের দাগ পরিষ্কার করতে

পোশাকে তেল বা তৈলাক্ত খাবারের দাগ পড়ে গেলে তা দ্রুত পরিষ্কার করা কঠিন। তবে আটা এই ধরনের দাগ দূর করতে সাহায্য করতে পারে। পোশাকে তেল পড়লে সাথে সাথে তাতে আটা ছিটিয়ে দিন। আটা তেল শুষে নিয়ে দাগের গভীরে যেতে বাধা দেয়। ১০-১৫ মিনিট পর অতিরিক্ত আটাটা ঝেড়ে ফেলে ভালোভাবে কাপড়টি ধুয়ে ফেলুন। এতে দাগ সহজে উঠে আসবে এবং পোশাকের রঙও ঠিক থাকবে। আটা দ্রুত তেল শোষণ করতে পারে, ফলে এই পদ্ধতি দাগের ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকরী।

৪. পোকামাকড়ের প্রতিরোধক

আটা ঘরের পোকামাকড় প্রতিরোধেও কাজে আসে। বিশেষ করে পিঁপড়ার আক্রমণ থেকে বাঁচতে আটা খুব কার্যকরী হতে পারে। যেখানে পিঁপড়ার লাইন দেখা যায়, সেখানে আটা ছিটিয়ে রাখুন। পিঁপড়া আটার গন্ধ পছন্দ করে না এবং এর সংস্পর্শে আসলে তারা দূরে সরে যায়। এটি একটি প্রাকৃতিক এবং রাসায়নিক মুক্ত উপায় পোকামাকড় থেকে মুক্ত থাকার জন্য। আটা ব্যবহারে কোনো ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই, তাই এটি একটি সহজ ও নিরাপদ সমাধান।

৫. ডায়াপার র‍্যাশের প্রতিরোধে আটা

শিশুদের ডায়াপার র‍্যাশের সমস্যায় আটা একটি প্রাকৃতিক এবং কার্যকরী সমাধান হতে পারে। ডায়াপারের কারণে শিশুর কোমর ও উরুর অংশে র‍্যাশ দেখা দিলে আটা শুকিয়ে সেই অংশে ব্যবহার করুন। এটি প্রাকৃতিক শীতলতার মাধ্যমে ত্বককে আরাম দেয় এবং র‍্যাশ দ্রুত সেরে উঠতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, বাজারে প্রচলিত অনেক র‍্যাশ ক্রিমে রাসায়নিক উপাদান থাকে, যা শিশুর ত্বকে প্রভাব ফেলতে পারে। আটা নিরাপদ ও প্রাকৃতিক হওয়ায় এটি শিশুর ত্বকে কোনো ক্ষতি করে না এবং সহজেই র‍্যাশের চিকিৎসা দেয়।

৬. মেটাল পরিষ্কারে আটা

মেটাল পরিষ্কার করতেও আটা একটি চমৎকার সমাধান। বিশেষ করে পিতল, তামা, এবং রূপার জিনিসপত্রের উপর জমে থাকা দাগ পরিষ্কার করতে এটি দারুণ কার্যকরী। আটা, ভিনেগার, এবং লবণের একটি পেস্ট তৈরি করুন এবং মেটালের উপর মাখিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন। এরপর একটি নরম কাপড় দিয়ে মেটালটি ঘষে পরিষ্কার করুন। এটি মেটালের উপর জমে থাকা ময়লা ও দাগ দূর করবে এবং জিনিসগুলোকে নতুনের মতো চকচকে করে তুলবে। রাসায়নিক ব্যবহার না করে আটা দিয়ে মেটাল পরিষ্কার করা একটি পরিবেশবান্ধব এবং সাশ্রয়ী উপায়।

৭. মুখের অবাঞ্ছিত লোম দূর করতে

আটা মুখের অবাঞ্ছিত লোম দূর করার জন্য একটি প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে কাজ করে। ময়দা, হলুদ এবং দুধ মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে মুখে লাগান। শুকিয়ে গেলে প্যাকটি আস্তে আস্তে ঘষে তুলে ফেলুন। এটি মুখের লোমকে আলগা করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। এই পদ্ধতিটি নিয়মিত ব্যবহার করলে মুখের অবাঞ্ছিত লোম ধীরে ধীরে কমে আসতে পারে। রাসায়নিক ব্যবহার ছাড়াই আটা একটি প্রাকৃতিক উপায়ে মুখের লোম দূর করতে সাহায্য করে, যা ত্বকের জন্যও ক্ষতিকর নয়।

তবে যাবার আগে…

আটা শুধুমাত্র রান্নার উপকরণ হিসেবেই নয়, বরং দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন ঘরোয়া সমস্যার সমাধানে ব্যবহৃত হতে পারে। ত্বক এবং চুলের যত্ন থেকে শুরু করে পোশাকে তেলের দাগ পরিষ্কার করা, পোকামাকড় প্রতিরোধ, এবং এমনকি শিশুদের ডায়াপার র‍্যাশ প্রতিরোধে পর্যন্ত আটা একটি প্রাকৃতিক ও কার্যকরী উপায় হিসেবে কাজ করে। এছাড়া মেটাল পরিষ্কার ও মুখের অবাঞ্ছিত লোম দূর করার মতো কাজেও আটা ব্যবহার করা যায়। প্রাকৃতিক ও রাসায়নিক মুক্ত সমাধান হিসেবে আটা একটি সহজলভ্য এবং সাশ্রয়ী উপাদান। তাই, শুধু খাবার নয়, আপনার দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন কাজে আটা কীভাবে ব্যবহার করা যায় তা জানা থাকলে, অনেক সমস্যার সহজ সমাধান করতে পারবেন।

Shop
Menu